Pageviews

Thursday, September 05, 2019

আমার অতন্দ্র শিক্ষক : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

জীবনে অনেক শিক্ষকের সান্নিধ্য লাভ করেছি । বহু শিক্ষকের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আজ হয়ত আমি, আমি হতে পেরেছি এবং তাঁদের অনেক উপদেশের উপেক্ষা আজ আমার অনেক ব্যর্থতার কারণ।
তবে, অতীতে গিয়ে ভুল সংশোধন করার ক্ষমতা আমার নেই। সেই সব শিক্ষকের শিক্ষা নতুন করে আহরণ করার উপায়ও নেই কারণ তাঁরা অনেকেই জীবিত নেই।
তাই প্রথাগত ভাবে অন্যের থেকে প্রায় ধার নেয়া শিক্ষক দিবসে তাঁদের স্মরণ করে আমার বার বার মনে হয় তাঁদের তুচ্ছ করেছি। আমার আপস, আমার মেনে নেয়া, আমার পোশাকি দৃষ্টিভঙ্গি কোথাও যেন আমার ইতিহাসের পরিপন্থী। আমার মর্যাদার পরিপন্থী, এবং জাতি হিসেবে আমার অবক্ষয়ের সূচক।
কারণ, যখনই আমি মনে করি বাংলা ভাষার আরোহণের মধ্যেই আমার ভবিষ্যৎ, ধর্মের সংকীর্ণতা থেকে মুক্তির মধ্যেই আমার আত্মজ্ঞান সম্ভব, স্বজাতির অগ্রগমনেই আমার অস্তিত্বের সারমর্ম অবস্থিত --
আমার চেতনার পটভূমি শুধু মাত্র একজন মহামানবের ছায়ামূর্তির আলোয় ভেসে ওঠে
--বিদ্যাসাগর।
আমি প্রতিনিয়ত তাঁর কাছে ফিরে যাই কেননা ২০০ বছরের ব্যবধানের সত্বেও তিঁনি অতন্দ্র এবং তাঁর শিক্ষা প্রাসঙ্গিক; এবং তা এতটাই যে আমার মতন মানুষ সম্পূর্ণ জীবন অতিবাহিত করেও তাঁর শিক্ষার মাত্র ১০ % রূপায়ণ করে উঠতে পারবে। শেষ ৯০ % জন্যে আর এক জন্ম প্রয়োজন।

অতঃএব, শিক্ষক হিসেবে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর আমার কাছে অদ্বিতীয় ও অবিনশ্বর, যাঁর সঠিক ও উপযুক্ত মূল্যায়ন ও মর্যাদায় আমি পূর্ণ।

Tuesday, August 27, 2019

বাঙালির প্রকৃত শত্রু

ধুতি পাঞ্জাবি পড়া বিশ্ব জ্ঞানী বাঙালি ভদ্রলোক বাকি বাঙালি কে আনফিলটর্ড চারমিনার এর ধোঁয়ায় উদ্ভাসিত করে শিখিয়ে গেছেন যে বাঙালির বাংলায় কিস্যু হবে না। তাই মুমূর্ষু বাঙালি দলে দলে পারি দিয়েছে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে। সেখানে তার প্রথম বিসর্জন তার মাতৃ ভাষা , দ্বিতীয় বিসর্জন তার ছেলে মেয়ের গোবলয়ও মানসিকতা, আর তৃতীয় এখনো প্রতীক্ষিত --NRC আর বাংলাদেশি তকমা।
অনুকরণপ্রিয় বাঙালি এখনো সেই মন্ত্রে উচ্ছাসিত -- ' বাংলায় কোনও ভবিষ্যত নেই '।


আর অন্য দিকে সেই সব-জান্তা ভদ্রলোকগণ মরিচঝাঁপির আশ্চর্য আদর্শ রূপায়ণ, উদ্ভাবন ও সহজাত বাঙালি মেধার কাছে আঁতকে উঠে শিক্ষিত বাঙালি কে বিতাড়িত করতে থাকে আর তার পরিবর্তে ৩৪ বছর ধরে হিন্দিভাষী, উর্দুভাষী আমদানি করে নব বিপ্লবের প্রস্তুতি নেয়।
বিপ্লব তো হলো বটে-- ভারত বর্ষ জুড়ে বাঙালির বৈপ্লবিক নামকরণ হলো 'কাঙালি '
আর মাড়োয়ারি বিহারি, উত্তর প্রদেশী, উর্দু ভাষী গণ হয়ে উঠলেন 'king maker , bourgeoisie ও foot soldiers।
এই নব বৈপ্লবিক ভূস্বর্গে এদের জন্যে পৃথক আইন, সুযোগ সুবিধে নীতি আদর্শ এবং ভাষা
আর পরে থাকা খর কুটো 'কাঙালীর' জন্যে কঠোর আইন ও হাতে গোনা জীবিকার পথ ও ভাষা বঞ্চনা।
দীর্ঘ সময় যাবৎ ইংরেজদের দাসবৃত্তি করা এই ইতর মেরুদন্ডহীন মানুষ গুলো যারা কখনো স্তালিনের জুতো আঁকড়ে ধরেছে, কখনো মাও সে তুঙের, বা কখনো পল পটের মতন রাক্ষসের পিছনে দাঁড়িয়েছে, তো আবার কখনো নিজেকে ভিয়েতনাম পরিচয় দিয়ে কলকাতায় নিজের দেশের সম্পত্তি আগুন ধরিয়েছে। রাস্তায় রাস্তায় বৈপ্লবিক নৃত্য করেছে।
আর আপামর বাঙালি এদের কেই রাহুর দশায় পরে আদর্শ মনে করে বসেছে যার পুরস্কার স্বরূপ উপাধি পেয়েছে--আত্ত্বঘাতী বাঙালি ।

বিপ্লব দীর্ঘজীবী হউক !

Tuesday, June 18, 2019

আমাদের মানসিকতা, আমাদের লজ্জা

সময় টা ছিল ৬০ এর দশকের মাঝামাঝি।
শ্রীরামপুর কলেজে কুপার নামে একজন জার্মান সাহেব থিওলজি ডিপার্টমেন্ট এ সংস্কৃত ও ডিভিনিটি (?) পড়াতেন। বাংলা ভাষায় ভীষণ ভাবে পারদর্শী। মাসের একটা নির্দিষ্ট দিনে উনি কলেজ থেকে বেশ খানিক টা দূরে একটি ব্যাঙ্ক এ যেতেন এবং ফিরে আসতেন পকেটে প্রায় সেই যুগে ৫০০০ টাকা নিয়ে। ব্যাপার টা প্রায় সবাই জানতো। উনি কলেজে শিক্ষক আবাসনে থাকতেন।

বাংলায় তখন নক্সাল আন্দোলন তুঙ্গে। এক রবিবার স্থানীয় খৃস্টান সম্প্রদায়ের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি গির্জায় উপাসনার পর কুপার সাহেব কে ইংরেজি তে বললেন, " সাহেব আপনি যে এই ভাবে নির্দিষ্ট এক ব্যাঙ্ক থেকে টাকা সংগ্রহ করে ফাঁকা রাস্তা ধরে রিকশায় কলেজের আবাসনে দুপুর বেলা ফেরেন, যে কোন দিন হয় নক্সাল নয় সমাজবিরোধীদের মুখ মুখী হবেন। মারা পড়বেন। "

কুপার সাহেব একটু হাঁসলেন, তারপর বেশ অবজ্ঞা ও ব্যাঙ্গাত্মক শুরে স্পষ্ট বাংলা ভাষায় বললেন ," যে জাতি ২০০ বছর ইংরেজদের জুতো চাটে, যে জাতির নায়ক, নেতা (নেতাজি) কে আপন দেশবাসীর পরিবর্তে বিদেশীদের কাছ থেকে সাহায্য চাইতে হয় দেশ স্বাধীন করার জন্যে, সেই জাতির জনা কয়েক দিকভ্রান্ত মানুষ একজন জার্মান এর কাছ থেকে টাকা ছিনতাই করার সাহস করবেনা। তাদের দেশি আগ্নেয়াস্ত্রের বিরুদ্ধে আমার দুটো জার্মান হাত যথেষ্ট।
এবং সত্যি তাই। কুপার সাহেব যতদিন শ্রীরামপুরে ছিলেন, কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখি হননি। নিজের সময় সীমা শেষ হলে জার্মান ফিরে যান, বাংলার ইতিহাস ও সাহিত্যের বিশাল সম্ভার নিয়ে।
আজ সেই মর্মে বলি:
একজন বৃদ্ধ রুগীর অবশ্যম্ভাবী মৃত্যু ঘিরে একজন বহিরাগত সমাজবিরোধী প্রায় ২০০ লোকজন (বহিরাগত সমাজবিরোধী) মোবিলাইস করে ও একজন ভূমিপুত্র বাঙালি ডাক্তার কে তারই দেশের মাটির ওপর গণপ্রহার করে। প্রায় মেরেই ফেলে ।
এই বাড়বাড়ন্ত কি তাদের অতিরিক্ত সাহস না আমাদের হীনমন্যতা ? আজ বাংলার জন্যে, বাঙালির অস্তিত্বের জন্যে যদি কেউ চিৎকার করে, কজন বাঙালি কে মোবিলাইস করা যেতে পারে ?
আজও কি আমরা সেই কুপার সাহেবের ইংরেজদের জুতো চাটা মুমূর্ষু ক্রীতদাস?
নিজে কে প্রশ্ন করুন !

Thursday, May 23, 2019

কার জয়, কার পরাজয় ?

তোষণ, ভিক্ষা ও মতাদর্শহীন রাজনীতি বেশি দিন টিকে থাকতে পারে না। আজ তা আবার প্রমান হলো। জয় আজ যারই হয় থাকুক বাঙালির কিন্তু পরাজয়, এবং শুধু পরাজয় বললে ভুল হবে-- বাংলার মাটিতে বাঙালির অধিকার, ভাষা ও সংস্কৃতির সুবর্ণ ইতিহাস, একটি জাতির আত্ম পরিচয় এবং তার সার্বভৌমত্বের পরাজয়ের আজ প্রথম অধ্যায় শুরু হলো।
বিগত ৩৪ বছর আমরা প্রশ্ন করিনি, 
আমরা ভেনেজুয়েলা, কিউবা নিয়ে রাস্তায় ভণ্ডামির আগুন জ্বালিয়েছি, আমরা প্রশ্ন করিনি
মরিঝাপির বাঙালির ওপর গুলি চালানো হয় ,
আমরা প্রশ্ন করিনি
তাদের মৃতদেহ বাঘে কুমিরে টেনে নিয়ে যায় ,
আমরা প্রশ্ন করিনি
বাংলা স্কুল কলেজ উচ্ছেদ করে হিন্দি স্কুল তৈরী করা হয়
আমরা প্রশ্ন করিনি
কলকাতায় উর্দু কে শীর্ষ স্থান দেয়া হয় পথনির্দেশ এর ভাষা হিসেবে, আমরা প্রশ্ন করিনি
বাঙালি ছেলে মেয়েরা মাওরা হয়ে রাস্তায়, খোলা আকাশের নিচে বিচার দাবি করে,
আমরা প্রশ্ন করিনি
বাঙালি ছেলে মেয়েরা চাকরি পায়না অথচ বহিরাগতরা সাধু, অসাধু উপায়ে সরকারি চাকরি হাতিয়ে বাংলায় জুড়ে বসে চলে,
আমরা প্রশ্ন করিনি I
বিগত ১০ বছরের তোষণ, ভিক্ষা, মতাদর্শনহীনতা,
আমরা প্রশ্ন করিনি
পিল পিল করে দিবারাত্রি অবাঙালি বাংলায় প্রবেশ করে যাচ্ছে বাঙালি ক্রমাগত ভাবে সংখ্যালঘু হয়ে যাচ্ছে,
আমরা প্রশ্ন করিনি
বাংলার কৃষি জমি, এলাকা, গ্রাম, পাড়া একে একে দখল হয়ে যাচ্ছে, আমরা প্রশ্ন করিনি ।
কত দিন মেরুদন্ডহীন হয়ে থাকবেন?
কাল আপনার ছেলে মেয়ে নাতি, নাতনির উত্তরসূরির কাছে কি পরিচয় দেবেন?
যে আপনি এক বীর বিপ্লবী জাতির ঐতিয যারা ভারত স্বাধীন করেছিল আর তার পর নিজেরাই পরাধীন হয়ে চিরতরে নিজের মাটিতে আপন সত্তা, সম্ভ্রম, সংস্কৃতি, ভাষা এমন কি নিজের অস্তিত্ব হারালো ?
নিজেকে প্রশ্ন করুন !

Sunday, May 05, 2019

আদর্শ ও জাতীয়তাবাদ : (বাঙালি DNA ও Moral Policing )

মোরাল পোলিসিং  সুস্থ সমাজে একটি নিন্দনীয় পদক্ষেপ।
সহমত। আমাদের মতন একটি প্রগ্রেসিভ জাতির এইরূপ চিন্তা শোভা পায় না।
কিন্তু  আমাদের প্রশ্ন যে, আমরা সত্যি কি আমাদের প্রোগ্রেসিভ জায়গা টা ধরে রাখতে পেরেছি? আমাদের পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি কিন্তু অন্য কথা বলছে।
আমি, আপনি অহিংসবাদী হতেই পারি / পারেন তাতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু যখন আপনি ভয়ানক ব্যাধির কবলে পড়েন তখন চিকিৎস্যকের দেয়া আন্টি বায়োটিক এক প্রকার হিংসা কেই কার্যকরী করে, এবং আপনার প্রাণ বাঁচায়।
টেকনিক্যালি আপনি কিন্তু আর অহিংসবাদী থাকলেন না।
আপনি, আমি, আমরা যাঁরা বাঙালির ভবিষ্যৎ নিয়ে কাজ করছি / করছেন, বা করবেন বলে মনে করছেন -- যদি আমাদের গৃহেই অবাঙালি মানুষজন বিবাহ সূত্রে অবস্থান করে, আমাদের মনে হয় বাংলায় আমাদের অস্তিত্বের লড়াই এর জায়গা টা ব্যক্তিগত ভাবে  খুব ঠুনকো হয়ে দাঁড়াবে। অপ্রাসঙ্গিক ও প্রসাধনী হয়ে উঠবে।
অবাঙালিদের ভাষায় কাগুজে কেরামতি হয়ে উঠবে।
একটু ভেবে দেখবেন।
জয় বঙ্গভূমি।

Thursday, May 02, 2019

বাঙালি DNA :

আপনারা যারা বাংলা ও বাঙালির কথা ভাবছেন বলছেন এবং সাধ্য মতন আন্দোলন করছেন, প্রতিবাদ করছেন -- আপনার কাছে একটি বিশেষ নিবেদন :
আপনার বাড়ি, পাড়ায়, এলাকায় কম বয়েসী ছেলে মেয়েদের সচেতন করুন, তারা যেন--
অবাঙালি ছেলে মেয়েদের সাথে ঋদ্ধতা না বাড়ায় কারণ আমরা লক্ষ করছি যে এই সব হিন্দি ভাষী মানুষ সহজে আমাদের পরিবারে বিবাহ সূত্রে প্রবেশ করে যাচ্ছে মোটা টাকার পণ অথবা সমৃদ্ধির লোভ দেখিয়ে।
এর মুলে আছে হিন্দি অনুপ্রেরিত শিক্ষা ব্যবস্থা, বিনোদন ও সংস্কৃতি যার সাথে যুক্ত হয় কর্মসংস্থান ও ক্রয়ক্ষমতা, যা আমাদের মনে জাতির প্রতি হীনমন্যতা সৃষ্টি করে।
মনে রাখবেন এটাও একটা সিস্টেম্যাটিক প্রক্রিয়া যা আমাদের DNA চেঞ্জ করে দিয়ে আমাদের সাংস্কৃতিক ভাবে সুদূর ভবিষ্যতে বিহার ও উত্তর প্রদেশের মানুষের মতন করে দেয়ার একটা সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা !
আপনারা যারা শিক্ষক, কোচ , স্কুলের কলেজের সিনিয়র ইত্যাদি, যারা তরুণ-তরুণী দের মনে যথেষ্ট সম্ভ্রম ও আদরের জায়গা রাখেন, এটা আজ আপনার জাতির প্রতি কর্তব্য !
বাংলার মাটি, জমি, অর্থনীতি ও বাঙালি DNA রক্ষার্থে এগিয়ে আসুন ।
যাঁরা টাকার লোভে বাঙালি জাতির গৌরব তাচ্ছিল্য করে মেরুদন্ডহীনতা আলিঙ্গন করছে তাদের সামাজিক বহিস্কার করুন। তাদের বিবাহ ভোজের নিমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করুন।
আমাদের অস্তিত্বের লড়াই আমাদের বাড়ি থেকেই শুরু হোক।
জয় বাংলা