সময় টা ছিল ৬০ এর দশকের মাঝামাঝি।
শ্রীরামপুর কলেজে কুপার নামে একজন জার্মান সাহেব থিওলজি ডিপার্টমেন্ট এ সংস্কৃত ও ডিভিনিটি (?) পড়াতেন। বাংলা ভাষায় ভীষণ ভাবে পারদর্শী। মাসের একটা নির্দিষ্ট দিনে উনি কলেজ থেকে বেশ খানিক টা দূরে একটি ব্যাঙ্ক এ যেতেন এবং ফিরে আসতেন পকেটে প্রায় সেই যুগে ৫০০০ টাকা নিয়ে। ব্যাপার টা প্রায় সবাই জানতো। উনি কলেজে শিক্ষক আবাসনে থাকতেন।
বাংলায় তখন নক্সাল আন্দোলন তুঙ্গে। এক রবিবার স্থানীয় খৃস্টান সম্প্রদায়ের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি গির্জায় উপাসনার পর কুপার সাহেব কে ইংরেজি তে বললেন, " সাহেব আপনি যে এই ভাবে নির্দিষ্ট এক ব্যাঙ্ক থেকে টাকা সংগ্রহ করে ফাঁকা রাস্তা ধরে রিকশায় কলেজের আবাসনে দুপুর বেলা ফেরেন, যে কোন দিন হয় নক্সাল নয় সমাজবিরোধীদের মুখ মুখী হবেন। মারা পড়বেন। "
কুপার সাহেব একটু হাঁসলেন, তারপর বেশ অবজ্ঞা ও ব্যাঙ্গাত্মক শুরে স্পষ্ট বাংলা ভাষায় বললেন ," যে জাতি ২০০ বছর ইংরেজদের জুতো চাটে, যে জাতির নায়ক, নেতা (নেতাজি) কে আপন দেশবাসীর পরিবর্তে বিদেশীদের কাছ থেকে সাহায্য চাইতে হয় দেশ স্বাধীন করার জন্যে, সেই জাতির জনা কয়েক দিকভ্রান্ত মানুষ একজন জার্মান এর কাছ থেকে টাকা ছিনতাই করার সাহস করবেনা। তাদের দেশি আগ্নেয়াস্ত্রের বিরুদ্ধে আমার দুটো জার্মান হাত যথেষ্ট।
এবং সত্যি তাই। কুপার সাহেব যতদিন শ্রীরামপুরে ছিলেন, কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখি হননি। নিজের সময় সীমা শেষ হলে জার্মান ফিরে যান, বাংলার ইতিহাস ও সাহিত্যের বিশাল সম্ভার নিয়ে।
আজ সেই মর্মে বলি:
একজন বৃদ্ধ রুগীর অবশ্যম্ভাবী মৃত্যু ঘিরে একজন বহিরাগত সমাজবিরোধী প্রায় ২০০ লোকজন (বহিরাগত সমাজবিরোধী) মোবিলাইস করে ও একজন ভূমিপুত্র বাঙালি ডাক্তার কে তারই দেশের মাটির ওপর গণপ্রহার করে। প্রায় মেরেই ফেলে ।
এই বাড়বাড়ন্ত কি তাদের অতিরিক্ত সাহস না আমাদের হীনমন্যতা ? আজ বাংলার জন্যে, বাঙালির অস্তিত্বের জন্যে যদি কেউ চিৎকার করে, কজন বাঙালি কে মোবিলাইস করা যেতে পারে ?
আজও কি আমরা সেই কুপার সাহেবের ইংরেজদের জুতো চাটা মুমূর্ষু ক্রীতদাস?
নিজে কে প্রশ্ন করুন !
No comments:
Post a Comment